চিরতরে গ্যাস দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায়

গ্যাস্ট্রিক, পেটে ফাঁপা ও অস্বস্তি? ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় খুজছেন? তাহলে সঠিক যায়গায় এসেছেন। এ পোস্টে চিরতরে গ্যাস দূর করার ১০টি উপায় দেওয়া হয়েছে।
চিরতরে-গ্যাস-দূর-করার-উপায়
প্রিয় পাঠক আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে আর সময় নষ্ট না করে চিরতরে গ্যাস দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্র: চিরতরে গ্যাস দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায়

ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিক বা পেটে গ্যাসের সমস্যা আজকাল বেশ পরিচিত একটি সমস্যা। এটি কেবল অস্বস্তিই নয়, বরং দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটায়। অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে পেটে ফাঁপা, ব্যথা, ঢেঁকুর ওঠা, এমনকি নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধও হতে পারে।অনেকে দিনের পর দিন ওষুধ খেয়ে যান, কিন্তু স্থায়ী সমাধান মেলে না।
অথচ ঘরোয়া কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই সমস্যা চিরতরে দূর করা সম্ভব। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব গ্যাসের মূল কারণ, খাবারের প্রভাব, চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় এবং চিকিৎসা নেওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে।

গ্যাসের সমস্যা কেন হয়?

চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় জানার আগে আমাদেরকে অবশ্যই গ্যাসের সমস্যা কেন হয়? এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। পেটে গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকেরই নিত্যদিনের সঙ্গী। যদিও এটি একধরনের হজমজনিত সমস্যা, তবে এর পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। নিচে প্রতিটি কারণ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. অতিরিক্ত ঝাল, তেল বা ভাজা খাবার খাওয়া
এ ধরনের খাবার হজমে সময় নেয় এবং পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ফলে খাবার সহজে ভাঙতে না পেরে গ্যাস তৈরি করে। তেলে ভাজা খাবারে অতিরিক্ত চর্বি থাকে যা হজমের গতি ধীর করে, ফলে পেটে ফাঁপাভাব ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

২. দ্রুত খাবার খাওয়া এবং না চিবিয়ে গেলা
খাবার ঠিকভাবে না চিবিয়ে দ্রুত খেলে তা পেটে বড় আকারে পৌঁছায় এবং হজমের চাপ বাড়ায়। এতে বায়ু (air) গিলে ফেলার সম্ভাবনাও থাকে, যা গ্যাসের অন্যতম উৎস। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে হজম এনজাইম ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

৩. একটানা বসে থাকা বা এক্সারসাইজ না করা
শরীর সচল না থাকলে হজমের প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে পড়ে। নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম অন্ত্রে গ্যাসের গঠন ও জমাট বাঁধা রোধ করে। একটানা বসে থাকা হজমে বিঘ্ন ঘটায় এবং পেটে গ্যাস জমে যেতে পারে।

৪. কার্বনেটেড ড্রিংকস ও কফি বেশি খাওয়া
সোডা, কোলা বা ফিজি পানীয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে যা সরাসরি পাকস্থলীতে বায়ুর পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। অপরদিকে, কফি অ্যাসিড রিফ্লাক্স তৈরি করে যা গ্যাসের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তোলে।

৫. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা
অনেকের শরীর দুধে থাকা ‘ল্যাকটোজ’ নামক চিনি হজম করতে পারে না, একে বলে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এর ফলে পেট ফাঁপা, বমি ভাব ও অতিরিক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যারা প্রাপ্তবয়স্ক, তাদের মাঝে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমজনিত সমস্যা
যারা নিয়মিত মলত্যাগ করতে পারেন না বা হজমে সমস্যা হয়, তাদের অন্ত্রে গ্যাস জমে থাকে। জমে থাকা মলও গ্যাসের পথ আটকে দেয়। ফলে পেটে অস্বস্তি ও চাপ সৃষ্টি হয়।

৭. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
মনে করা হয় গ্যাস কেবল খাওয়ার কারণে হয়, কিন্তু মানসিক চাপও বড় ভূমিকা রাখে। স্ট্রেস বা টেনশন আমাদের হজমের হরমোনকে ব্যাহত করে, যার ফলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় মানসিক অস্থিরতা গ্যাস্ট্রিককে আরও বেশি তীব্র করে তোলে।

চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায়

নিচের উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে গ্যাসের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে এবং অনেক ক্ষেত্রেই চিরতরে নির্মূল হতে পারে:

১. আদা ও মধুর মিশ্রণ
আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা পাকস্থলীর পেশি শিথিল করে ও হজমশক্তি বাড়ায়। অন্যদিকে, মধু পেটে গঠিত অ্যাসিডকে প্রশমিত করে। প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ আদার রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে হজম উন্নত হয় ও গ্যাসের পরিমাণ কমে যায়।

২. গরম পানিতে লেবু ও মধু
খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করলে তা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি মেটাবলিজম বাড়ায় এবং হজম দ্রুত হয়, ফলে গ্যাস জমে না।

৩. জিরা ও সাদাবিজের পানি
জিরা হজমের রস উৎপন্ন করে আর সাদাবিজ অন্ত্রের ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ জিরা ও সাদাবিজ ৫-৭ মিনিট সেদ্ধ করে ঠান্ডা হলে পান করলে পেটে গ্যাস ও অস্বস্তি দ্রুত হ্রাস পায়।

৪. পুদিনা পাতা চা
পুদিনা পাতায় থাকা মেন্থল উপাদান পেটের পেশি ও অন্ত্রকে শিথিল করে, ফলে ফাঁপাভাব দূর হয়। প্রতিদিন এক কাপ পুদিনা পাতা চা পান করলে হজমের সমস্যা ও গ্যাস উভয়ই কমে।

৫. তুলসী পাতা চিবানো
তুলসী পাতা প্রাকৃতিকভাবে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে। প্রতিদিন সকালে বা দুপুরে খালি পেটে ৪–৫টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।

৬. দই খাওয়া
দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে হজম শক্তি উন্নত করে। খাবারের পর এক বাটি টক দই খেলে গ্যাস তৈরি হয় না এবং পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে।

৭. নিয়মিত পানি পান
চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে পানি বেশ কার্যকারি। পর্যাপ্ত পানি শরীরের বিপাকক্রিয়া (Metabolism) উন্নত করে এবং হজমে সহায়তা করে। খাবারের আগে ও পরে এক গ্লাস করে পানি পান করলে পেটে গ্যাস জমে না এবং হজম সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।

৮. এলাচি ও আদা চা
এলাচি হজমে সাহায্য করে এবং পেট ঠান্ডা রাখে, আর আদা হজমশক্তি বাড়ায়। এই দুই উপাদান দিয়ে তৈরি চা প্রতিদিন সকালে পান করলে গ্যাস্ট্রিক ও গ্যাসের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। এটি বমি ভাব ও অম্বলেও উপকারী।

৯. শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার
আঁশ (ফাইবার) অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য গ্যাসের অন্যতম কারণ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, লাউ, কলা, শসা ও ব্রাউন ব্রেড রাখলে গ্যাসের সমস্যা হ্রাস পায়।

১০. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
ধূমপান ও অ্যালকোহল উভয়ই পাকস্থলীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এ অভ্যাস দুটিকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া উচিত।

কোন খাবার গ্যাস তৈরি করে বেশি?

অনেকেই চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় সমূহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার পরও খুব একটা ভালো ফল পান না। এটি হওয়ার কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের খাবার তালিকায় এমন কিছু খাবার বেশী পরিমানে খেয়ে থাকি যা আমাদের গ্যাসের সমস্যাকে পুনরায় বাড়িয়ে দেয়। গ্যাসের সমস্যা থাকলে কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত। নিচে এরূপ কিছু খাবারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

১. অতিরিক্ত ঝাল ও ভাজা খাবার
ঝাল খাবারে ক্যাপসাইসিন থাকে, যা পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করতে সহায়ক। ভাজা খাবারে বেশি তেল থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি করে, যার ফলে পেটে ফাঁপাভাব এবং অস্বস্তি হতে পারে।

২. কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন
পেঁয়াজ এবং রসুনে ফ্রুকট্যানস নামক একটি প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত যৌগ থাকে, যা পেটে গ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করে। যদিও রান্নায় পেঁয়াজ এবং রসুন খাওয়ার সময় অনেকটা গ্যাস কম হয়, কাঁচা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যায়।

৩. বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা
বাঁধাকপি, ফুলকপি ও মুলা গ্যাস তৈরি করার জন্য বেশ পরিচিত। এই সবজিগুলোতে সল্ফার যুক্ত যৌগ থাকে যা গ্যাস এবং পেট ফাঁপানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গ্যাস-ফরমিং ভেজিটেবলস হিসেবে এগুলো খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ভালো।

৪. সোডা বা কার্বনেটেড ড্রিংকস
সোডা ও অন্যান্য কার্বনেটেড ড্রিংকসে কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে, যা পাকস্থলীতে বুদবুদ তৈরি করে এবং গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এই ধরনের পানীয় খাবারের সঙ্গে খেলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে যেতে পারে।

৫. মসুর ডাল ও ছোলা
মসুর ডাল এবং ছোলার মতো ডালগুলোর মধ্যে ফ্রুকট্যানস থাকে, যা গ্যাস উৎপন্ন করতে সহায়ক। এসব ডালে অনেক ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হতে সময় নেয় এবং গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে। তবে রান্না করে বা সঠিকভাবে ভিজিয়ে রাখলে কিছুটা সমস্যা কমে যেতে পারে।

৬. ময়দা ও বেকড ফুড
ময়দা ও বেকড ফুডে রিফাইনড শর্করা (refined sugar) এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, যা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে। এগুলো হজম হতে সময় নেয় এবং পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে থাকতে পারে।

৭. অতিরিক্ত কফি ও চা
কফি ও চা গ্যাসের সমস্যায় আরও বাড়তি ঝামেলা তৈরি করতে পারে কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে, যা পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং হজমের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত কফি বা চা পানের ফলে গ্যাসের অনুভূতি ও অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে।

গ্যাস প্রতিরোধে খাবার তালিকা

আমরা ইতিমধ্যে কোন খাবার গ্যাস তৈরি করে বেশি এ সম্পর্কে জেনেছি। চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে গ্যাস প্রতিরোধে খাবার তালিকা সম্পর্কে অবশ্যই জেনে রাখা জরুরি। গ্যাসের সমস্যা কমাতে কিছু খাবার অত্যন্ত কার্যকর। এসব খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস কমাতে সহায়তা করে। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:

১. পাকা কলা
পাকা কলায় পটাসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যা পেটের অস্বস্তি ও গ্যাসের অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু রাখে এবং পেটের মধ্যে জমে থাকা অতিরিক্ত গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস করতে সহায়ক।

২. টক দই
দই প্রোবায়োটিক উপাদানে সমৃদ্ধ, যা পেটের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি হজমশক্তি উন্নত করে, অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। প্রাতঃরাশ বা খাবারের শেষে এক বাটি টক দই খেলে হজম ভাল হয়।

৩. পেঁপে
পেঁপে একটি শক্তিশালী হজমকারক ফল, কারণ এতে থাকা প্যাপেইন নামক এনজাইম প্রোটিন হজমে সাহায্য করে। এটি পেটের গ্যাস কমাতে ও হজম প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সহায়ক। পেঁপে খেলে পেটের অস্বস্তি ও ফাঁপাভাব কমে।

৪. শসা
শসা উচ্চ পানি ধারণকারী একটি শাকসবজি, যা হজমে সহায়তা করে এবং পেট ঠান্ডা রাখে। এটি গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হওয়া রোধ করে। শসা খেলে পেটের অস্বস্তি কমে যায়।

৫. আদা
আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা গ্যাস এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। এটি পেটের শিথিলতা দূর করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটে জমে থাকা অতিরিক্ত গ্যাস বের করে দেয়। এক কাপ আদা চা প্রতিদিন খেলে গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে।

৬. জিরা
জিরায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, যা হজমে সহায়তা করে। এক গ্লাস পানিতে জিরা ভিজিয়ে রেখে তা পান করলে পেটের ফাঁপাভাব কমে এবং গ্যাস দূর হয়। এটি পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৭. ব্রাউন রাইস
ব্রাউন রাইসে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখে। এর ফলে গ্যাস জমে না এবং হজম ভালো হয়। প্রতিদিন ব্রাউন রাইস খান, বিশেষত খাবারের সঙ্গে, এটি পেটকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

৮. লাউ ও ঝিঙে
লাউ এবং ঝিঙে অল্প গ্যাস তৈরি করে এমন খাবার। এগুলো হজমের জন্য উপকারী এবং পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হতে দেয় না। এই সবজিগুলো পেট ঠান্ডা রাখে এবং অন্ত্রে সুষ্ঠু কার্যক্রম বজায় রাখে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তনে গ্যাস দূর করা সম্ভব

চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় এর মধ্যে অন্যতম কার্যকারি উপায় হচ্ছে জীবনযাত্রার পরিবর্তন। কারণ শুধু খাবার নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কিছু ভুলের কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের গ্যাসের সমস্যা বাড়তে থাকে। জীবনযাত্রাতে কি কি পরিবর্তন আনলে গ্যাসের সমস্যা কমে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন
  • একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে বারবার অল্প করে খান
  • খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান
  • রাতে দেরি করে খাওয়া পরিহার করুন
  • মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা নামাজ পড়ুন
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত জীবনযাপন বজায় রাখুন

কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?

গ্যাসের সমস্যাটি যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় বা নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
  • নিয়মিত পেটব্যথা বা ফোলাভাব
  • রক্তবমি বা মলের সঙ্গে রক্ত
  • ওজন কমে যাওয়া
  • অতি দ্রুত ঢেঁকুর বা বমি বমি ভাব
  • গ্যাসের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আশাকরি উপরের আলোচনা থেকে চিরতরে গ্যাস দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করে দিন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
গ্যাসের সমস্যা ছোট হলেও তা দীর্ঘমেয়াদে বড় স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ওষুধ নির্ভর না হয়ে বরং ঘরোয়া উপায় ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রাকৃতিক উপাদান এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাসই পারে গ্যাস দূর করতে চিরতরে। আজ থেকেই আপনার খাদ্য ও জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url