জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আপনি যদি জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন
রচনাটি খুজে থাকেন তাহলে একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছেন কেননা আমরা এই
আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ অথবা, জলবায়ু
পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনাটি তুলে ধরেছি।
আশা করি রচনাটি আপনাদের উপকারে আসবে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা গুলোর মধ্যে এটি
অন্যতম। প্রিয় পাঠক আপনি যদি রচনাটি পড়তে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন ও
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনাটি পড়ে না যাক।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রচনার সংকেত সমূহ
জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন
অথবা,
গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া ও
বাংলাদেশ
ভূমিকা
বিশ্বায়নের এ মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্ব যেসব ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি হয়েছে তার মধ্যে
সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য 'গ্রিন হাউজ ইফেক্ট' বা গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া। মূলত
গ্রিন হাউজ ইফেক্ট পরিবেশ দূষণেরই একটি বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া, যা বিশ্ববাসীকে এক
নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বলা বাহুল্য, এর জন্য দায়ী মানুষ নিজেই।
গ্রিন হাউজ
সাধারণভাবে ইংরেজি Green House অর্থ 'সবুজ ঘর'। এ ঘরের ছাদ ও দেওয়াল তাপ
বিকিরণরোধী বিশেষ ধরনের কাচ দিয়ে তৈরি। গ্রীষ্মকালে এ ঘরে সূর্যালোক ও উত্তাপ
প্রবেশ করে, কিন্তু বিকিরণ না ঘটায় তাপ বের হতে পারে না। সঞ্চিত সূর্যতাপে বৈরী ও
শীতার্ত পরিবেশেও তাই শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। শীতের দেশে এ ধরনের বৈজ্ঞানিক
ঘরকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন 'গ্রিন হাউজ' বা 'সবুজ ঘর'।
গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার কারণ
মহাশূন্যে আবহাওয়ামণ্ডলে 'ওজোন স্তর' নামে অদৃশ্য একটি বেষ্টনী বিদ্যমান। এ ওজোন
স্তর পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ রোধ করে এবং বিকিরণ
প্রক্রিয়ায় পৃথিবী থেকে আসা তাপ মহাশূন্যে পুনরায় ফিরে যেতে। সহায়তা করে।
বিশ্ববাসীরই নানা কর্মকাণ্ডে প্রকৃতি প্রদত্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী ওজোন স্তর
ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে।
গৃহস্থালি পণ্য ফ্রিজ এয়ারকন্ডিশনার এবং বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ইত্যাদিতে ব্যবহৃত
হয় ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সিএফসি) গ্যাস। এগুলো বায়ুমণ্ডলে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির
ফলে ইনফ্লায়েড রেডিয়েশনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং সূর্য থেকে আগত কিছু তাপ পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডল ধরে রাখে।
এভাবে একদিকে ওজোন স্তরের ক্ষয়জনিত কারণে মাত্রাতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে
পৌঁছাচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে প্রতিদিন সঞ্চিত হচ্ছে উত্তাপ। ফলে পৃথিবী হয়ে
উঠছে উত্তপ্ত। অপরদিকে, পৃথিবী থেকে বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার ফলে বৃক্ষ কর্তৃক কার্বন
ডাইঅক্সাইড গ্রহণের হারও কমছে। সামগ্রিকভাবে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার ফলে ঘটছে
প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার ফল
গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার কুফল গোটা বিশ্ববাসীর জন্যই মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনছে।
এটা প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক
তাপমাত্রা ১.৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কারণে তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৫
ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এ
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
ইতোমধ্যে উচ্চতাপের কারণে মেরু অঞ্চলে কোটি কোটি বছর ধরে সঞ্চিত থাকা বরফ গলতে
শুরু করেছে। বরফ গলা এ পানি নেমে আসছে সমুদ্রে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি
দেশের মতো সমতল দেশগুলোর বিশাল অঞ্চল পানির নিচে চিরতরে তলিয়ে যাবে।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বক-ক্যানসারসহ মানুষকে ভোগ করতে হবে জটিল
স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন বনাঞ্চলে দাবানল
সৃষ্টি হবে। সমুদ্রের স্রোত। পরিবর্তিত হবে। সবুজ-শ্যামল বিভিন্ন দেশে মরুকরণ
প্রক্রিয়া শুরু হবে। অতি বন্যা, খরা, এসিড বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস
পৃথিবীবাসীকে বিপন্ন করে তুলবে। ধ্বংস হবে জীববৈচিত্র্য। ভেঙে পড়বে খাদ্যশৃঙ্খল
বা বাস্তুসংস্থান।
বাংলাদেশে গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব
বাংলাদেশ একটি সমতল ভূমির দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা এত কম যে, যদি
সমুদ্রের পানি মাত্র ৩ ফুট বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশের অন্তত শতকরা দশ ভাগ ভূমিই
তলিয়ে যাবে। ১৫% আবাদযোগ্য ও ৩.৩০% বনভূমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সার্বিকভাবে অন্তত আড়াই কোটি মানুষ আশ্রয় হারাবে।
সমুদ্রস্ফীতির কারণে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী,
পটুয়াখালী, বরগুনা প্রভৃতি জেলার আবাদি জমিতে সহজেই লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ
ঘটবে। ফলে এসব জেলার আবাদি জমি কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। মানুষের ব্যবহার্য
মিষ্টি পানির উৎস হারিয়ে যাবে। বিলুপ্ত হবে স্বাদু পানির প্রচলিত মৎস্যসম্পদ।
গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার ফলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে।'
নিম্নচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে অতি বন্যা ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যা, সামুদ্রিক
জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাদুর্ভাব ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে
মরুকরণ প্রক্রিয়া লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এর বিশাল এলাকা ভবিষ্যতে অনুর্বর নিষ্ফলা
হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিরাচরিত ঋতুচক্র ভেঙে যাচ্ছে, দেখা দিয়েছে অতি শীত এবং অতি
গ্রীষ্মের দাপট। গ্রীষ্মকালে 'শীত এবং শীতকালে অকাল বন্যা লক্ষ করা যাচ্ছে।
প্রতিকার অনুসন্ধান
গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া একটি বৈশ্বিক সংকট। গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে
বাংলাদেশের এককভাবে করার কিছুই নেই। বিশ্বের উন্নত অনুন্নত সকল দেশের আন্তরিক
ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু কর্মপন্থা গ্রহণ করা হলে এক্ষেত্রে সুফল প্রত্যাশা করা
যায়। সারা বিশ্বে গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে শিল্পকারখানায় সিএফসি গ্যাসের
ব্যবহার নিষিদ্ধ করা সর্বাগ্রে জরুরি।
সমুদ্রে শিল্প বর্জ্য নিষ্কাশন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষা
সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। বৃক্ষ নিধন প্রতিরোধ ও বনায়নকে বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ
দিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প জ্বালানি উদ্ভাবন করতে হবে। অতি শিল্পায়ন ও
অতি নগরায়ণকে নিরুৎসাহিত করা এবং পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। উপকূলে বাঁধ ও সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টিকল্পে দূষণ প্রতিরোধ
বাড়াতে হবে।
উপসংহার
গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া একটি মানবসৃষ্ট পরিবেশ দূষণজনিত মহাবিপর্যয়ের নাম। মানুষ
অবিবেচকের মতো এ পরিবেশকে ধ্বংস করে ডেকে এনেছে অনিবার্য এক বিপর্যয়। এখনও সময়
আছে, বিপর্যয় ভয়ংকররূপে আঘাত হানার আগেই সাবধান হওয়ার। তাই এ ব্যাপারে সকলের
সচেতন হওয়া আবশ্যক।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url